ব্র্যান্ডেড ঘড়ির মাঝে সব থেকে বেশি নকল করা হয় রোলেক্সের, কেননা এটির জনপ্রিয়তা ও ভক্তের সংখ্যা সারা পৃথিবী জুড়ে। তাছাড়া এর ব্র্যান্ডমূল্য সম্পর্কে কম-বেশি সবাই পরিচিত তাই যারা এটি ক্রয় করতে পারে না তারাও এর একটি নকল পণ্য নিজের সংগ্রহে রাখতে চায়। তবে রোলেক্স ছাড়াও অন্যান্য কিছু ঘড়িও নকল করা হয় । এর মাঝে অন্যতম হল কারটিয়্যের। আজকে আমরা আসল কারটিয়্যের কীভাবে সনাক্ত করব তা জানব।

ক্রমিক নম্বর
প্রত্যেকটি ঘড়ির থাকে নির্দিষ্ট
একটি ক্রমিক নম্বর। এটি কেবল ঘড়ির ক্ষেত্রেই না , যেকোনো পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একটি পণ্য কোনো কোম্পানি
তৈরি করার সাথে সাথেই এটি কত তম পণ্য এর এক ক্রমিক ঠিক করে দেয়া হয়। এই ক্রমিক নম্বরের
সাথে ঐ কোম্পানির অপর কোনো পণ্যের ক্রমকি নম্বর কখনই মিলবে না। তাই ক্রমিক নবর খুব
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারটিয়্যের কোম্পানির ঘড়ির অনেক নকল ঘড়ি বাজারে রয়েছে। বাজারে এসব নকল
হতে বাঁচতে হলে সবার আগে আমাদের ঘড়ির ক্রমিক নম্বরের দিকে তাকাতে হবে। আসল
কারটিয়্যের ঘড়িতে ক্রমিক নম্বর দেয়া থাকে এর পাশে অথবা পিছনে।
এছাড়াও ডায়ালের কাঁচের
ভেতরে নম্বর যেখানে বসানো থাকে সেই নম্বর দুইটির মাঝে যে ছোট খালি যায়গা থাকে
সেখানে কারটিয়্যের লেখা থাকে। আর ক্রমিক নম্বর পাশে অথবা পিছনে ঘড়ির সাথে ভালো করে
খোদাই করা থাকে। ক্রমিক নম্বর লেখার ধরনের
মাঝে কোন প্রকারের আলাদা নকশা দেখবেন না বা জাঁকজমক কিছুই দেখা যাবে না। অপর দিকে
আপনি যদি নকল কারটিয়্যের কিনতে যান , তাহলে খেয়াল করবেন এই ক্রমিক নম্বর পাশে বা পিছনে নেই। আবার যদি
পাশে বা পিছনে থেকেও থাকে দেখবেন এর খোদাই করা ক্রমিক নম্বরটি ঘড়ির সাথে ভালোভাবে যায়নি। ঘড়ির
উপরে একটু আলাদা হয়ে নম্বরগুলো ভাসছে।

কাবোচন পাথর
কাবোচন পাথর বেশ
মূল্যবান এক প্রকার রত্ন বিশেষ। এটিকে একটু গোলাকার করে কাঁটা হয় তবে এর ধার কখনই
সূক্ষ্ম ধারালো হয় না। বেশ মসৃণ সব দিক থেকে সমান করে কাঁটা থাকে। এই পাথরের পৃষ্ঠ
উত্তল হয়ে থাকে সব ফিক থেকে সমান তবে একটু উঁচু , অনেকটা মসজিদের গুম্বজের মত।
ঘড়ির ক্ষেত্রে এর
উইন্ডিং অর্থাৎ যে মেশিনের সাহায্যে ঘড়ি কাজ করবে সেটি এই পাথরের তৈরি হয়ে থাকে। যেটি
আসল কারটিয়্যের তার উইন্ডিং মেশিনেও এই মূল্যবান কাবোচন পাথর বসানো থাকবে। নকল
ঘড়িতে এ কাবোচন বসানোর কাজ কেউই করবেনা। তাছাড়া ঘড়ির মেশিন ও কাঁচ বা কোন ধরনের
পাথরের কাজ ঐ ঘড়িটিকে আরো জটিল বানায়। এই জটিল কাজের জন্যেই এর মূল্যও বেড়ে যায়।
তাই নকল ঘড়িতে কাবোচন পাথর দেখা যাবেনা যা একটি আসল কারটিয়্যেরে দেখবেন।
কাঁচ
ঘড়ির ডায়ালে কাঁচ খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। কারন কাঁচের মাধ্যমেই ডায়ালের ভেতরের অংশকে সুরক্ষা দেয়া হয়। আর
একটি ভালো ঘড়ির যে সকল বৈশিষ্ট্য দেখে
আপনি এর দাম নির্ধারণ করবেন তার মাঝে এর উপরি পৃষ্ঠের কাঁচ অন্যতম। কাঁচ যত সুন্দর
ও মসৃণ হবে ঘড়ি দেখতে হবে তেমন আকর্ষণীয়। একটি ভালো ঘড়ির কাঁচে নিজের

প্রতিবিম্ব খুব ভালো করে
দেখতে পাওয়া যাবে। তাছাড়া উপরি পৃষ্ঠের কাঁচ ঘড়িটিতে এমনভাবে বসানো থাকবে যে মূল
ঘড়ির সাথে কাঁচের একটি অবিচ্ছিন্ন সম্পর্ক বোঝা যাবে। পৃথক মন হবে। কারটিয়্যের
ঘড়ির দুইটি প্রধান বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। প্রথমত এটি সবধরনের স্ক্র্যাচ-নিরোধী।
কেউ যদি কোন কিছু দিয়ে ঘড়ির কাঁচের উপর কোন ধরনের ঘষা দেয় তাহলে কারটিয়্যের এর
কাঁচে সেই সংঘর্ষের কোনো প্রকারের দাগ বা চিহ্ন দেখা যাবে না। নকল কারটিয়্যেরে
অবশ্যই এই সুবিধা নেই। তাই আপনি চাইলেই যেখান থেকেই কারটিয়্যেরের ঘড়ি কিনবেন
সেখানে বিক্রেতার অনুমতি নিয়ে এই পরীক্ষাটি করতে পারেন। বিক্রেতা আপত্তি জানালে
বুঝতেই পারছেন ঘড়িটি আসল না নকল।
ঘড়িটির দ্বিতীয় প্রধান বৈশিষ্ট্য
হলো, যে এর কাঁচের দেয়ালের উপরে পানির ফোটা দিলে ফোটা সঙ্গে সঙ্গেই কাঁচের দেয়াল
বেয়ে নিচে পড়ে যায়। এই পানির ফোটা একটুর জন্যেও কাঁচে স্থির থাকে না। নকল ঘড়ি ক্রয়
করার আগে এই পরীক্ষিটি করে দেখতে পারেন। বিনা পরীক্ষায় ক্রয় করে আনা কারটিয়্যেরের
ক্ষেত্রেও এই পরীক্ষাটি করতে পারেন।
লেখা
ঘড়ির উলটো পাশে ঘড়িটির
মডেল নম্বর থেকে শুরু করে সন, তারিখ বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য খোদাই করে লেখা
থাকবে। এই খোদাই করা কাজটি কারটিয়্যের খুব ভালোভাবে করে থাকে, বলতে গেলে এটি
যেকোনো দামি, মূল্যবান ঘড়ির একটি তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য । খোদাই করা লেখা সমূহের কাজ অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে সম্পাদন
করা হয়। ঘড়ির পিছনের স্টিল অংশে এই লেখাগুলো খোদাই করা থাকে। একটু ভালো করে লক্ষ্য
করলেই দেখা যাবে লেখাগুলোর খাঁজ মসৃণ ও এর ভেতরে কোন ধরনের কাঁটা-ছাটা নেই।

অথচ একটি নকল কারটিয়্যের
এরকম সূক্ষ্ম কারুকার্য হয় না। ঘড়ির লেখাগুলো খাঁজ কাঁটা হয় না বরং ঘড়ির স্টিলের
থেকে উপরে একটু মোটা করে ভাসমান হয়ে থাকে। এছাড়াও একটু ভালো করে খেয়াল করলে দেখা
যায় লেখাগুলো অস্পষ্ট। লেখার ক্ষুদ্র অংশও স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে কাজের সমাপ্তি
ঠিক মত করা হয় নি। এক ধরনের অসম্পূর্ণতা লক্ষ্য করা যায়।
পছন্দের ঘড়িগুলোর তালিকায় যারা কারটিয়্যেরকে রাখতে চাইবেন, তারা অবশ্যই ক্রয় করার আগে একটু দেখে নেবেন।
তথ্যসূত্র- https://www.armourwinston.co.uk/cartier-spot-a-fake/
ফিচার ছবি- WatchTime Middle East
0 Comments