ঘড়ির জগতে দামী ব্র্যান্ড
সমূহের মধ্যে একটি হলো পাতেক ফিলিপ্প। এর এক একটি ঘড়ির মূল্য ৮ লক্ষ, ১০ লক্ষ
থেকে শুরু করে ৫০ লক্ষ কিংবা এরও বেশি হতে পারে। সব থেকে দামী যে ঘড়িটি
পাতেকের বাজারে আছে সেটি হলো, পাতেকের ক্রোনোগ্রাফ যার মূল্য ৫ লক্ষ
মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় যা ৪ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা। পাতেকের প্রতিটি ঘড়ি কেবল হাতেই যে তৈরি করা হয় এবং এর জন্যেই
যে এটি এতো মূল্যবান তা নয়। এটি তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয় অত্যাধুনিক ও দামী সকল সরঞ্জামাদি। ঘড়ির সবগুলো অংশ জোড়া
লাগাতে এক বছরের মত সময় চলে যায়।

কেবল বিশাল অংকের টাকা আপনার
পকেটে থাকলেই আপনি পাতেকের একটি ঘড়ি ক্রয় করতে পারবেন না, কারণ
পাতেক প্রতিবছর মাত্র ৫০ হাজার ঘড়িই বাজারে ছাড়ে যদি রোলেক্সের সাথে তুলনা করা হয় তবে
রোলেক্স প্রতিবছর ৭ লক্ষ ঘড়ি বাজারে ছাড়ে। তাই ধনীদের পছন্দের
ঘড়ি ব্র্যান্ডের তালিকায় সব সময় পাতেক ফিলিপ্প থাকে। আজকে আমরা পাতেক ফিলিপ্প
তৈরি সম্পর্কে জানবো।
নকশা অঙ্কন
প্রথমে সাদা কাগজে ঘড়িটির
মূল নকশা অঙ্কন করা হয়। মূল নকশা বলতে ঘড়ির ডায়াল, ডায়ালের চারপাশে কয়টি স্ক্রু
থাকবে, ডায়ালের ভেতরে কি রকম হবে এগুলো সূক্ষ্মভাবে অঙ্কন
করা হয়। এছাড়াও আমরা প্রায় দেখি ঘড়ির ডায়ালের পাশে কিনার ঘেষে কিছু খাঁজ কাটা অংশ বিদ্যমান। নকশা করার ক্ষেত্রে
ঐ খাঁজ কাঁটা অংশেরও অঙ্কন করতে হয়। ঘড়িতে কয়টি ঘর থাকবে , ঘরের নাঝে ঠিক কত দূরত্বে লেখা খোঁদাই
করা থাকবে সব কিছু নকশার অন্তর্ভুক্ত থাকে। সম্পূর্ণ ঘড়ির একটি
নকশা প্রাথমিকভাবে একটি সাদা কাগজে স্কেচ করে নেয়া হয়।
থ্রি ডি তে রূপান্তর

পেন্সিল স্কেচে অঙ্কিন্ত নকশাটি পরবর্তী ধাপে একটি থ্রি ডি মাধ্যমে নেয়া হয়। সেই থ্রি ডি অংশে সম্পূর্ণ ঘড়ির সামনে পিছনে বাম-ডান সব দিক দিয়ে ঘুরিয়ে দেখা হয়। কোথায় কোথায় কী রকম নকশা হবে সেটা সেখানে দেখানো হয়। বিষয়গুলো আরো স্পষ্ট করে তুলে ধরা হয়। ঘড়ির ডায়ালের পাশ কতটুকু মোটা হবে সেটির রঙ কি হবে, কোথাও কোনো খাঁজ কাঁটা বা ছিদ্র স্বরুপ নকশা আছে কিনা সব কিছু আরো বিশাল করে দেখানো হয়। এভাবে নকশা অংশের পরিসমাপ্তি ঘটে।

যান্ত্রিক অংশ
পাতেকের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র অংশ আগে উন্নতে ধাতু দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে। এই যন্ত্রাংশ সমূহ বিশাল আকারের কয়েকটি মেশিনের মাধ্যমে তৈরি করা হয়। প্রথমেই ডায়ালের কয়েকটি ছাঁচ তৈরি করা হয়। তারপর ঐ অংশটি পানিতে ভেজানো হয়। এরকম ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্ক্রু যেগুলো বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে, যেমন কতগুলো স্ক্রু আছে যেগুলোর সম্মুখ অংশের ব্যাস অর্ধ সেন্টিমিটারের হয়ে থাকে আবার কতগুলো যান্ত্রিক অংশ এমনও রয়েছে যেগুলোর ব্যাস এক মিলিমিটার বা এর থেকেও কম হয়ে থাকে। প্রতিটি যন্ত্র তৈরি করে পুনরায় পানি দ্বারা ও বিভিন্ন ক্যামিক্যাল দ্বারা ধৌত করা হয়।
পারটেক্স কিংবা কাঠের গুরোর মত দেখতে একটি ছোট্ট পাটাতন রয়েছে সেটির উপর বিভিন্ন অংশ রেখে ঘষার জন্য ব্যবহার করা হয়। কিছু কিছু ক্ষুদ্রাকৃতির চাকতির মত অংশ রয়েছে এই যন্ত্র গুলোর খাঁজ আরো ধারালো ও তীক্ষ্ণ করার জন্য একটি বড় যন্ত্রের পেন্সিলের নিপের মত একটি অংশ রয়েছে সেখানে প্রবেশ করানো হয়। এতে করে সেই খাঁজ গুলো আরো সূক্ষ্ম হয়ে ওঠে।

প্রতিটি অংশই থ্রি ডি চিত্রের
অনুরূপ তৈরি করা হয়। একটুও যদি না মিলে তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকার ঘড়ি সম্পূর্ণ অচল
হয়ে যাবে। তাই প্রতিটি অংশ কয়েক দশমিক মিলিমিটার পর্যন্ত ক্ষুদ্র হলেও সেই মাপেই এগুলো
তৈরি করা হয়। যেসকল অংশ সোনালী রঙ করা হবে পরবর্তী ধাপে ঐ সব অংশ সোনালী অংশ করা হয়। তারপর ছাটাই করার
যন্ত্র থাকলে সেগুলো আবার ছাটাই করা হয়। তারপর প্রতি কাজ শেষে পুনরায় মূল নকশাটিকে আবার বড় করে পর্দায়
রেখে তার সাথে তৈরি করা যন্ত্রাংশ সমূহ মিলিয়ে দেখা হয়।
প্রতিটি যন্ত্র আকারে এবং
দেখতে কিছু না কিছু ভিন্নভাবে তৈরি করা হয়। কারণ একই রকম অনেক গুলো যন্ত্র থাকলে সেগুলো পরস্পরের সাথে
মিলে যাবে এবং তখন কাজ করা যাবে না। এমনকি কোন যন্ত্রাংশ কোনটির সাথে যাবে , কোন
অংশের সাথে বসবে, কোনটির উপরে বসবে সেটিও মূল নকশার সাথে মিলিয়েই
করা হয়। আকার ও দেখতে একই ধরনের হলে এই ধাপে কাজ করতে গেলে সমস্যা হবে যার ফল হিসেবে
ঘড়িটিই চলবে না।

হাতের কাজের অংশ
প্রতিটি ক্ষুদ্র অংশ জোড়া
লাগানো কারিগর নিজের হাতের সাহায্যেই করে থাকে। হাতে অবশ্যই গ্লাভস
বা হাত মোজা পরিহিত অবস্থায় থাকতে হয়। ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ ধরার জন্য এক দিকের পাশাপাশি দুই প্রান্ত
সরু এমন সূক্ষ্ম সরু ও লম্বা একধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এটির সাহায্যে একটি
যন্ত্রকে ধরে বসানো হয়। তাছাড়া কলমের মত দেখতে একটি যন্ত্র থাকতে সেই যন্ত্রের সাহায্যে
একটি যন্ত্রের উপরে আরেকটি যন্ত্র আঠা জাতীয় কিছু দ্বারা বসানো হয় । এরকম মূল নকশার সাথে
মিল রেখে প্রতিটি কাজ করা হয়। ডায়ালের বেইস আলাদা করে তৈরি করা হয়। এর উপর লেখা মেশিনের
মাধ্যমে বসানো হয়। তারপর ঘণ্টা, মিনিট ও সেকেন্ডের কাঁটা একটির উপর একটি বসানো হয়।
একটি পাতেক তৈরি করতে এরকম ২৫০ এরও বেশি ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ তৈরি ও এক সাথে বসানো হয়। এর প্রতিটি ধাপের কাজ খুবই জটিল ও ব্যবহুল তাই মূল্যও অনেক বেশি।
ফিচার ছবি- Money Inc
0 Comments