যান্ত্রিক বা অন্যান্য উপায়ে সময়ের হিসেব করা ৫৫০০ বছর আগে প্রাচীন মিশর প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার দক্ষিণাঞ্চল যা বর্তমানে আধুনিক সভ্যতার জন্মস্থান হিসাবে বিবেচিত হয় সেখানে শুরু হয়েছিল। হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি যেমন সূর্যালোক, বালির ঘড়ি এবং জলের ঘড়ি তৈরির ফলে, এই প্রযুক্তিগুলোর জ্ঞান শীঘ্রই ভূমধ্যসাগর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। ভূমধ্যসাগর থেকে জাত্রা শুরু করে গ্রীক, রোমান এবং পার্সিয়ান সাম্রাজ্যগুলিকে এই ধারা আলিঙ্গন করতে করতে তাদের সময়ের অগ্রগতির তরঙ্গ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। শতাব্দী ধরে চলতে চলতে সময়টি মোমবাতির ঘড়ি, ধূপের ঘড়ি, তেল-প্রদীপের ঘড়ি, সাধারণ গিয়ার ঘড়ি, জ্যোতির্বিদ্যার ঘড়িগুলি দিয়ে ১৫ ও ১৬ শতকে পৌছে প্রথমে তার আধুনিক চেহারা দেখানো শুরু করে ছিল। ঘড়ি এবং ঘড়ির আগে প্রথম দিকের পরিমাপ ডিভাইসগুলি ছিল সূর্যাল, ঘন্টাঘড়ি এবং জলের ঘড়ি। আজকে আমরা ঘড়ি বৃত্তান্তের ২য় পর্ব সময় হিসেবের ইতিহাস নিয়ে জানব।
১. সানডায়াল
সানডিয়ালের অগ্রদূতরা হলেন পোলস এবং লাঠি এবং সেইসাথে পিরামিড এবং অন্যান্য লম্বা কাঠামোর মতো বৃহত্তর বস্তু। পরে আরও ফর্মাল সানডিয়াল উদ্ভাবিত হয়েছিল। এটি সাধারণত একটি রাউন্ড ডিস্ক বা পাটাতনের মত যা ঘড়ির মতো ঘন্টার সাথে চিহ্নিত থাকে। এটির একটি খাড়া কাঠামো রয়েছে যা ডিস্কে একটি ছায়া ফেলে – এটিই সূর্যালের সাথে সময়কে মাপা হয়।

প্রাচীন মিশরে খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের দিকে সানডিয়ালগুলি প্রদর্শিত হতে শুরু করেছিল, প্রাচীনতম ওবেলিস্কটি প্রায় ৩৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে তৈরি হয়েছিল। সূর্য তাদের প্রাথমিক উপাস্য হিসেবে বিবেচিত হত তাই সূর্যের ছায়ার পরিমাপ সেই সময়ের মধ্যে অনেক মনোযোগ পেয়েছিল। সময় সহজেই পরিমাপ করার জন্য, মিশরীয়রা দিনের সময়কে ১০ টি সমান ভাগে বিভক্ত করেছিল, ৪ টি অতিরিক্ত অংশ ভোর এবং সূর্যাস্তের জন্য গোধূলি ঘন্টা রাখত। স্থলভাগের চিহ্নিতকারীগুলির মিশরীয়দের সহজেই সময় নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছিল। সূর্যালোকগুলি মেঘলা আবহাওয়া বা রাতের সময়গুলিতে একেবারে অকার্যকর ছিল। সেই উদ্দেশ্যে, সময় পরিমাপের জন্য নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা হয়েছিল।
২. বালি ঘড়ি বা ঘণ্টা ঘড়ি
প্রাচীনকালেও ঘড়ি ব্যবহৃত হত। এটি দুটি গোলাকার কাচের বাল্বগুলি দিয়ে তৈরি হয়েছিল যার মধ্যে কাঁচের সরু ঘাড় দ্বারা সংযুক্ত ছিল। ঘড়ির কাঁচটি যখন উল্টো দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়, তখন বালির কণাগুলির একটি পরিমাপ করা পরিমাণ কাঁচের উপর থেকে নীচে বাল্ব পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। আজকের দিনের টাইমারগুলি হল ঘড়ির কাচের আধুনিক সংস্করণ।

ঘন্টাঘড়িও কখনও কখনও একটি বালির ঘড়ি বা একটি বালির গ্লাস হিসাবে উল্লেখ করা হত। ঘন্টাঘড়ি প্রস্তুতকারককে সময়টির সঠিক দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে অবশ্যই যন্ত্রটি পরীক্ষা করতে হবে এবং এটি ঠিক ভাবে সাজিয়ে নিতে হবে করতে হবে। এমন অনেকগুলি কারণ রয়েছে যা সময়কে সঠিকভাবে পরিমাপ করতে একটি ঘন্টাঘড়ির সক্ষমতার উপর নির্ভরশীল। বালির ধরণ এবং গুণমান জানা প্রয়োজন। এই গুনমান আসলে কী? তার অবশ্যই প্রবাহের হার থাকতে হবে যা ওঠানামা করে না। বালি কণা বেশ
মোটা হবে নাকি ক্ষুদ্র এর সাথে কাচের ছিদ্রটি যার ভেতর দিয়ে বালি প্রবেশ করবে তা
কের অনুপাত কেমন হবে তাও তারা নির্ণয় করে নিত। এই বালির মাধ্যমে সময় গননা বা ঘণ্টা
ঘড়ি নাবিকদের মাঝেও বেশ জনপ্রিয় ছিল। আমরা অনেক সিনেমাতে পুরাতন ঘর বাড়ি দেখাতে বা
প্রাচীন কিছু বোঝাতে বিশেষ করে ভূতের কিছু দেখাতে এই ঘণ্টা ঘড়ির ব্যবহার দেখে
থাকি। ঘণতা ঘড়ি ইউরোপে প্রথম এসেছিল অষ্টাদশ শতকে। প্রথমে ফ্রান্সে এই ধরনের ঘড়ি
মানুষ দেখেছিল তারপর সময়ের পরিক্রমার ১৫ শতকে এটি ইউরোপের ইতালিতে এর বহুল ব্যবহার
লক্ষ্য করা যায়।
৩. পানি ঘড়ি

আর একটি প্রাচীন সময় পরিমাপক হল পানির ঘড়ি বা ক্লিপসাইড্রা। ক্লিসাইড্রা বা পানির ঘড়িই প্রথম যা সূর্যের আলোর
কোনোরূপ সহায়তা ব্যতিতই ঠিকভাব এসময় নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছিল। এটি প্রথমে
আবিষ্কৃত হয় প্রাচীন মিশরে। রাজা আমেনহতে এক এর সমাধিতে প্রায় খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০
অব্দে এটি ছিল বলে ধারনা করা হয়। পরবর্তী সময়ে মহাজ্ঞানী গ্রিকরা এই পদ্ধতি
ব্যবহার করা শুরু করে দেয়। তারা একটি অতি চিকন যায়গা দিয়ে পানি ফোটা আকারে নির্গত
করতে থাকে। এই পানি ফোটা গুলো একটি জলাধারে জমা হত যেখানে ছিল একটি ভাসমান দন্ড বা
চিহ্নিত করতে পারে এমন বস্তু যার মাথা থাকত ঘণ্টা বরাবর। এভাবে পানির ধাক্কার ফলে
সময়ে সময়ে কাঁটা সরে যেত এবং মানুষ এটি দেখে সময় নির্ণয় করতে পারত। গ্রিকদের পর এই
একই পদ্ধতি দেখা গিয়েছিল মধ্য প্রাচ্যের লোকদের এসব সময় নিরনায়ক পদ্ধতি ব্যবহার
করতে।
৪. মোমবাতির ব্যবহার
মোমবাতি দিয়ে সসময় নির্ণয়ের
পদ্ধতি মধ্যযুগে দেখা যায়। তবে এর প্রথম সন্ধান পাওয়া যায় চাইনিজ কবিতা সমূহ। ৫১২
খ্রিষ্টাব্দে এর ব্যবহার এর শুরু কাল জানা যায়। তবে এর সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করেন
আরবীয় বিজ্ঞানী আল-জাজ্রি। তিনি মোমবাতির সাথে ঘড়ির কাটা আর অনেক কিছুর ব্যবহারও
করেছিলেন। ইউরোপেও এর ব্যবহার হয়েছিল। খুব সম্ভবত ক্রুসেডররা যখন আরবদের লাইব্রেরি
সমূহে আক্রমণ করে সেখান থেকে তারা ইউরোপে এই সময় নির্ণয়ের বিভিন্ন পদ্ধিও নিয়ে
যায়। মম্বাতি দিয়ে কেবল সময়ের পার্থক্য জানা যায় অর্থাৎ কতটুকু সময় অতিবাহিত হয়েছে
তা জানা যায়। কারন মোমবাতির গলনকাল ধ্রুব। তবে এরও সীমাবদ্ধতা ছিল। বাতি বন্ধ হয়ে
গেলে বা মোম নষ্ট হয়ে গেলে এই পদ্ধতি কাজ করতে পারত না।

সময়ের পরিক্রমায় এসব সময় নির্ণয়ের
বিভিন্ন পদ্ধতিও হারিয়ে যায়। মানুষ পায় নতুন পদ্ধতি, উন্নত ধারা তবে ইতিহাসের
পাতায় আর সিনেমার পর্দায় এইসব কিছু আমাদের জন্যে এন্টিক হয়েই থেকে যায়।
তথ্যসূত্র
১. https://www.youtube.com/watch?v=F59bcxTICxg
২. http://www.beaglesoft.com/maintimehistory.htm
৩. http://www.historyofwatch.com/clock-history/timekeeping-devices-history/
Featured Image: Posterlounge
0 Comments